ঐতিহ্য বহনকারী মাথাভাঙ্গা সেতুতে ফাটল বড় দূর্ঘটনার শঙ্কায়  যানচলাচল বন্ধ

মামুন মোল্লা,চুয়াডাঙ্গাঃ-(১৩/০৬/১৯)
চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীর উপর স্থাপিত সেতুটি যান  চলাচলের জন্য একেবারে প্রায় অনোপযোগী হয়ে পড়েছে। সেতুর মাঝখানে দেখা দিয়েছে মারাত্মক ফাটল ও ইট পাথরের পলেস্তারা খসে পড়ে সৃষ্ট হয়েছে বড় ধরনের গর্ত। চুয়াডাঙ্গা ও পাশ্ববর্তী জেলা মেহেরপুরের একমাত্র সংযোগস্থল।  বিচ্ছিন্ন  হয়ে পড়েছে দুপারের মানুষের জীবন যাত্রা।
মাথাভাঙ্গা নদীর নামেই সেতুর নাম করা হয়।
১৯৫৮ সালে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর ৫০০ ফুট (১৪০ মিটার) দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনী চুয়াডাঙ্গা ত্যাগ করার সময় মুক্তিযোদ্ধারা যাতে তাদের পিছু না নিতে পারে সে জন্য   মাথাভাঙ্গা সেতুর পশ্চিম দিকে দুটি শক্তিশালি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্রজের একাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তী সময়ে মেরামতের পর সব ধরনের যানবাহন চলাচল শুরু করে। তার পর থেকে এ সেতুটি ব্যবহার করে আসছে দুই জেলার মানুষ।  যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ভারী যান চলাচলের কারনে সেতুতে গর্ত সৃষ্টি ও ফাটল দেখা যায়।
মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের মধ্যে সড়কপথে চলাচলকারী মানুষ বিপাকে পড়েছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সেতুটি দ্রুত মেরামত করে ছোট ও মাঝারি যান চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হলেও ভারী যানবাহন আর কোনো দিনই এই সেতুর ওপর দিয়ে চলতে পারবে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভারী যানবাহনগুলোকে বিকল্প পথে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রাক নিয়ে পার হওয়ার সময় মাঝখানে গর্ত দেখতে পান ট্রাকচালক। বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশসহ অন্যদের জানালে তা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান ও সওজের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। কর্মকর্তারা সেতু মেরামত না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। এ সময় সেতুর উভয় প্রান্তে বিশাল যানজট সৃষ্টি হয়। রাতেই লোহারপাত, বিটুমিন ও পাথর দিয়ে গর্ত মেরামত করা হয়।
এদিকে ভারী যানবাহন চলাচল ঠেকাতে গতকাল বুধবার মাথাভাঙ্গা সেতুর উভয় প্রবেশমুখে দুটি করে আরসিসি খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয়েছে। এরপর মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে ঢাকা পথে চলাচলকারী বাস-ট্রাকগুলো বিকল্প পথে দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর সেতু ও আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া বেইলি সেতু হয়ে চলাচল শুরু করেছে।
 সওজ বিভাগ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে,  মাত্র ১০ মেট্রিক টন ভার বহনের উপযোগী করে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে ৩০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন বা এর বেশি পরিমাণ পণ্য নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচল করে। এতে গার্ডারে ফাটলসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেতুটি ক্রমেই ব্যবহারের অনুপযোগী হতে থাকে। সেতুর ওপর দিয়ে ১০ টনের বেশি পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কেউই তা মানছে না।
 শুভেন্দু কুমার নাথ নামের একজন এনজিও কর্মী জানান, এর আগে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সেতুটিতে প্রথম গর্ত দেখা দেয়। সওজের কর্মকর্তারা লোহারপাত, পাথর ও বিটুমিন দিয়ে জোড়াতালির সংস্কার করে কোনো রকম যান চলাচলের ব্যবস্থা করেন। এরপর ভারী যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকলেও কিছুদিন পর পুরোদমে চলাচল শুরু করে।
 সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আদম আলী জানান, সেতুটিতে বড় ধরনের মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনার ও সওজের বিভাগীয় প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। সেতুটি দ্রুত মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হবে। তবে এই সেতুর ওপর দিয়ে পাঁচ টনের বেশি পণ্য বহনকারী ট্রাক চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না।

আপনি আরও পড়তে পারেন